...আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম___ওয়েবসাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ...

যেভাবে ভুয়া থার্ড পার্টি অ্যাপস চিনবেন

 স্মার্টফোন ব্যবহারের অধিকাংশ সুযোগ-সুবিধাই পেয়ে থাকি বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে। তবে প্রায়ই আমরা আসল অ্যাপ চিনতে না পারায় ভুয়া অ্যাপ ডাউনলোড করে ফেলি। যার ফলে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যা অনেক সময় খুব নেতিবাচক একটা প্রভাব ফেলে আমাদের জীবনে।

ভুয়া থার্ড পার্টি অ্যাপস চিনতে হলে কিছু সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। নিচে কিছু পদ্ধতি দেয়া হলো যেগুলোর মাধ্যমে আপনি ভুয়া থার্ড পার্টি অ্যাপস শনাক্ত করতে পারেন:

১. ডেভেলপার সম্পর্কে তথ্য পরীক্ষা করুন:

   - অ্যাপটি যে ডেভেলপার বা প্রতিষ্ঠান প্রকাশ করেছে, তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। যদি ডেভেলপার বা প্রতিষ্ঠান অপরিচিত বা অস্বচ্ছ মনে হয়, তবে সেটি ভুয়া হতে পারে।

 - গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপল অ্যাপ স্টোরে ডেভেলপারের নাম এবং অন্যান্য অ্যাপস সম্পর্কে তথ্য খুঁজে দেখুন।

২. রিভিউ ও রেটিং পরীক্ষা করুন:

   - অ্যাপটির রিভিউগুলো ভালো করে পড়ুন। যদি বেশিরভাগ রিভিউ খুবই সাধারণ বা সন্দেহজনক ধরনের হয় (যেমন, একে অপরের সাথে মিল থাকা বা খুবই পজিটিভ), তবে তা ভুয়া অ্যাপ হতে পারে।

   - অ্যাপের রেটিং খুব বেশি হলে, সেটি যাচাই করুন। অনেক সময় ভুয়া রেটিং বা ফেক রিভিউয়ের মাধ্যমে অ্যাপগুলো জনপ্রিয় করা হয়।

 ৩. অ্যাপের অনুমতি পরীক্ষা করুন:

   - অ্যাপটি ইনস্টল করার সময় যে অনুমতিগুলো চাচ্ছে, সেগুলো মূল্যায়ন করুন। যদি একটি অ্যাপ আপনার ফোনের অযথা কিছু অনুমতি চায়, যেমন, যোগাযোগ, ক্যালেন্ডার, মাইক্রোফোন বা ক্যামেরা যখন তা প্রয়োজনীয় না, তবে তা ভুয়া হতে পারে।

   - উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো গেম অ্যাপ আপনার কন্টাক্ট তালিকা বা মাইক্রোফোনের অনুমতি চায়, তবে সেটি সন্দেহজনক।

 ৪. অ্যাপের আকার ও বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করুন:

   - ভুয়া অ্যাপগুলির আকার অনেক সময় অস্বাভাবিক হতে পারে। যদি অ্যাপটি প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয় বা অতি কম বা অতি বেশি আকারের হয়, তবে সেটি যাচাই করা উচিত।

   - এছাড়া, অ্যাপটি প্যাকেজ নাম (package name) বা আইকন দেখতে খুব সাধারণ বা অদ্ভুত হতে পারে, যা এর ভুয়া প্রকৃতি নির্দেশ করতে পারে।

 ৫. অফিসিয়াল অ্যাপ স্টোর ব্যবহার করুন:

   - অ্যাপ ইনস্টল করার সময় সর্বদা গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপল অ্যাপ স্টোরের মত অফিসিয়াল স্টোর ব্যবহার করুন। তৃতীয় পক্ষের ওয়েবসাইট থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করলে সেটি অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

- কিছু অ্যাপ স্টোরে শুধু অফিশিয়াল অ্যাপসই থাকে, যেখানে আপনি ফেক অ্যাপ থেকে দূরে থাকতে পারবেন।

 ৬. অ্যাপের আপডেট নিয়মিত পরীক্ষা করুন:

   - অ্যাপটি যদি নিয়মিত আপডেট না হয় বা ডেভেলপারের দ্বারা নির্দিষ্ট কোনো আপডেট নেই, তবে সেটি সন্দেহজনক হতে পারে।

   - নিরাপত্তা প্যাচ এবং ফিচার আপডেটের অভাব ভুয়া অ্যাপগুলির একটি সাধারণ লক্ষণ হতে পারে।

 ৭. অ্যাপের কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করুন:

   - অ্যাপটি যদি ব্যতিক্রমীভাবে ধীরে চলতে থাকে, ক্র্যাশ করে, বা অদ্ভুত আচরণ করে, তাহলে এটি ভুয়া অ্যাপ হতে পারে।

   - যে অ্যাপগুলি ভালোভাবে কাজ না করে বা অন্য অ্যাপগুলির তুলনায় অস্বাভাবিক ত্রুটি বা সমস্যা তৈরি করে, তা ফেক হতে পারে।

 ৮. অ্যাপের রিভিউ অন্যান্য সাইটে চেক করুন:

   - গুগল বা অ্যাপল স্টোরের বাইরে অন্যান্য সাইট, ফোরাম বা টেক রিভিউ সাইটে অ্যাপটির সম্পর্কে পড়ুন। অনেক সময় ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন সাইটে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে, যা আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

 ৯. অ্যাপের সোর্স কোড চেক করুন (যদি সম্ভব হয়):

   - কিছু ক্ষেত্রে, যদি আপনি টেকনিক্যালি দক্ষ হন বা একজন ডেভেলপার হন, আপনি অ্যাপটির সোর্স কোড বা এর আচরণ পরীক্ষা করতে পারেন। অনেক ভুয়া অ্যাপ সিকিউরিটি দুর্বলতা ব্যবহার করে এবং এগুলোর সোর্স কোড বা আচরণ অপরিচিত হতে পারে।

   - যদি অ্যাপটি ওপেন সোর্স হয়, তবে আপনি GitHub বা অন্য সোর্স কোড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মে যাচাই করতে পারেন।

 ১০. অ্যাপ ব্যবহার করার পর ফোনের নিরাপত্তা পরীক্ষা করুন:

   - যদি আপনি কোনো সন্দেহজনক অ্যাপ ইনস্টল করেন, তাহলে তা ব্যবহার করার পর আপনার ফোনের নিরাপত্তা পরীক্ষা করুন। যেমন, আপনার ফোনের ব্যাটারি দ্রুত শেষ হচ্ছে কিনা, ডেটা ব্যবহারের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে কিনা, কিংবা আপনার ফোনে কোনো অজানা অ্যাপ বা ফাইল উপস্থিত কিনা।

   - আপনি Antivirus বা Anti-malware অ্যাপ ব্যবহার করে ফোন স্ক্যান করতে পারেন, যা দূষিত বা ক্ষতিকারক অ্যাপস শনাক্ত করতে সহায়তা করে।

 ১১. অ্যাপের প্রাইভেসি পলিসি পরীক্ষা করুন:

   - ভুয়া অ্যাপস প্রাইভেসি পলিসি খুবই সাধারণ বা অবাস্তব হতে পারে। একটি বৈধ অ্যাপ সাধারণত তার প্রাইভেসি পলিসি এবং শর্তাবলী পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করে। 

   - আপনি যদি কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করেন এবং তার প্রাইভেসি পলিসি না পেতে পারেন, বা এটি খুবই অস্পষ্ট বা অকার্যকর মনে হয়, তবে সেই অ্যাপ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

 ১২. বিভিন্ন অ্যাপ ডাউনলোডের উৎস পরীক্ষা করুন:

   - অনেক সময় অ্যাপগুলো গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপল অ্যাপ স্টোরের বাইরে তৃতীয় পক্ষের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা হয়। এসব উৎস নিরাপদ নয় এবং এটি প্রায়ই ক্ষতিকারক বা ভুয়া অ্যাপ বিতরণ করে থাকে।

   - APKMirror, APKPure ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম গুগল প্লে স্টোরের বিকল্প হতে পারে, তবে সেগুলিও সঠিকভাবে যাচাই করা প্রয়োজন।

 ১৩. অ্যাপ ইনস্টল করার পর ফোনের পারফরম্যান্স মনিটর করুন:

   - ভুয়া অ্যাপ ইনস্টল করার পর ফোনের পারফরম্যান্স যেমন, ডিভাইস ধীর হয়ে যাওয়া, ব্যাটারি দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়া, অথবা ওয়াইফাই বা ডেটার ব্যবহার বেড়ে যাওয়া সাধারণত একটি রেড ফ্ল্যাগ হতে পারে।

   - এসব সমস্যা দেখা দিলে, অ্যাপটি সরিয়ে ফেলুন এবং পুনরায় ফোনটি স্ক্যান করুন।

 ১৪. অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত সতর্কতা অবলম্বন করুন:

   - ভুয়া অ্যাপ অনেক সময় আপনার পাসওয়ার্ড, ব্যাংক ডিটেইলস, বা অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে। অ্যাপ ইনস্টল করার সময় আপনি যদি আপনার কোনো সেবার লগইন ডিটেইলস দিতে বলে, তবে সাবধান থাকুন।

   - প্রয়োজনে, আপনি Two-factor authentication (2FA) চালু রাখতে পারেন, যা অ্যাকাউন্ট সুরক্ষা বাড়াতে সাহায্য করবে।

 ১৫. অ্যাপের ইতিহাস ও জনপ্রিয়তা যাচাই করুন:

   - কিছু ভুয়া অ্যাপ বছরের পর বছর ধরে অন্য নাম দিয়ে আবার আসে। অ্যাপটি নতুন বা অপরিচিত মনে হলে, তার ইতিহাস বা পূর্ববর্তী সংস্করণ খুঁজে দেখুন। 

   - আপনি TrustPilot, Reddit, Quora ইত্যাদি ফোরামে অ্যাপটির সম্পর্কে মানুষের অভিজ্ঞতা জানতে পারেন। সেখানে অনেক ব্যবহারকারী তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে থাকে এবং এই রিভিউগুলো আপনাকে অ্যাপটির আসল প্রকৃতি সম্পর্কে জানাতে সাহায্য করতে পারে।

 ১৬. অ্যাপটি ব্যবহার না করলে আনইনস্টল করুন:

   - যেকোনো অ্যাপ ব্যবহার না করলে, দ্রুত আনইনস্টল করে দিন। অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো ফোনের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াতে পারে এবং আপনার ডিভাইসে অতিরিক্ত বাগ বা ম্যালওয়ার সংক্রমণের সুযোগ তৈরি করতে পারে।

 ১৭. ফোনের সিস্টেম আপডেট রাখুন:

   - আপনার ফোনের অপারেটিং সিস্টেম (অ্যান্ড্রয়েড বা আইওএস) সর্বদা আপডেট রাখুন। অনেক সময় সিস্টেম আপডেটের মাধ্যমে নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্যাচ এবং বাগ ফিক্স আসে, যা আপনার ডিভাইসকে ম্যালওয়ার এবং ভুয়া অ্যাপস থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।

এই টিপসগুলো অনুসরণ করে আপনি সহজেই ভুয়া থার্ড পার্টি অ্যাপস থেকে আপনার ডিভাইসকে রক্ষা করতে পারবেন এবং নিরাপদে অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন।

এই সব পদ্ধতি অনুসরণ করলে, আপনি ভুয়া থার্ড পার্টি অ্যাপস থেকে নিরাপদ থাকতে পারবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url